রাজু আহমেদ রাজশাহীঃ
রাজশাহীর তানোর উপজেলা বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি রবি মৌসুমে ১২ হাজার ৫৩ হেক্টর জমিতে এবার সরিষা আবাদ হয়নি। এবার ৭৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে, আবাদ করা হচ্ছে ৬৫ হাজার ২৯৭ হেক্টর জমিতে। গেল বছর তেলবীজ জাতীয় ফসলটি আবাদ হয়েছিল ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে।
রাজশাহী কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, চাষের জমি কমলেও উৎপাদনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। এখন পর্যন্ত ছত্রাক বা রোগবালাই না থাকায় এবার উচ্চ ফলন পাওয়া যাবে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৬০ টন। এ বছর ফলন ৬০ হাজার টন উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরিষা চাষে জমির উর্বরতা বাড়ে। প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে গড়ে ছয়-সাত মণ সরিষা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বীজ বপন থেকে ৭০-৭৫ দিনে ফসলটিতে তেমন সেচ দিতে হয় না। বপনের সময় মাটির নিচে সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার দিলেই চলে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে কম খরচ, কম শ্রম ও দ্রুত ফলন পাওয়া যায়। এ কারণে চাষিরা লাভ বেশি পান। ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার চাহিদা থাকলেও চলতি বছর চাষের জমি কমেছে।
রাজশাহীর তানোর৯টি ইউনিয়ন সরিষার চাষ করা হচ্ছে। আমন ধান কাটার পর উপজেলার কৃষকরা বোরো মৌসুমের আগেই সরিষা চাষ করেছেন। চলতি বছর বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭, বিনা-৯, বিনা-৪, টরি-৭ জাতের সরিষা চাষ করেছেন তারা।
সরেজমিন তানোর উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। ভোরের কুয়াশা, সকালের মিষ্টি রোদ কিংবা বিকেলের শীতের স্নিগ্ধতার মধ্যে দিগন্তজোড়া হলুদ সরিষা ফুল এক অন্য রকম সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছে মাঠে মাঠে। কোথাও কোথাও সরিষাখেতে মৌ-বক্স বসিয়ে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহের কাজ চলছে।
তানোরউপজেলা গ্রামের চাষি ইউনূস ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই তিনি চার বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেন। এবার কৃষি কর্মকর্তারা আরও বেশি জমিতে চাষ করার পরামর্শ দেন। গত বছর ভালো লাভ হওয়ায় তিনি রাজি হয়ে যান। এবার চাষ করেছেন সাত বিঘা জমিতে। এই জমি থেকে ইতোমধ্যে দুই হাজার টাকার শাক বিক্রি করেছেন তিনি।
মাদারিপুর গ্রামের শামসুল ইসলাম জানান, এবার তিনি নয় বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। গত বছর তিনি প্রতি বিঘায় সাত-নয় মণ ফলন পেয়েছিলেন। প্রতি মণ সরিষা শুরুতে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি করেছিলেন। এবারো তেমনটিই আশা করছেন।
চাষী আব্দুল বাছেদ জানান, সরিষা চাষে বিঘাপ্রতি খরচ ৫-৬ হাজার টাকা। চাষের ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। গত বছর সরিষা বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা। বাজারে এখনো ভালো মানের সরিষা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার উচ্চ ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবার চাষের জমি কমেছে। প্রতি হেক্টরে ফলন ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৬ টন। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৭৫ হাজার টন সরিষা উৎপাদন হতে পারে